মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ও ব্যবহার Mobile Banking

মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ও ব্যবহার Mobile Banking

মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ও ব্যবহার

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের একটি আধুনিক রূপ হলো মোবাইল ব্যাংকিং, যার মাধ্যমে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন করা যায়। বাংলাদেশে এর ব্যবহার বর্তমানে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক এক মাসে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, প্রযুক্তি-নির্ভর এই সেবাটি এখন সময় সাশ্রয়ী ও নিরাপদ লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গণ্য হচ্ছে। গ্রাহকরা এখন ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপ বা ইউএসএসডি (USSD) কোড ব্যবহার করে সহজেই টাকা পাঠানো, গ্রহণ, বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন আর্থিক কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।

মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ও ব্যবহার Mobile Banking
মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ও ব্যবহার Mobile Banking

 কেন প্রয়োজন ( why is it needed?)

মোবাইল ব্যাংকিং (Mobile Banking ) হল এমন একটি ব্যবস্থা। যেখানে গ্রাহকরা ব্যাংকের শাখা ছাড়াই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমস্ত আর্থিক লেনদেন করতে পারেন। সাধারণত স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, মোবাইল অ্যাপে লগইন করে পিন দিয়ে টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ এবং একাউন্ট ব্যালেন্স দেখা যায়। এছাড়া মোবাইল ফোনে রিচার্জ করা। অনলাইন কেনাকাটা করা বা জ্বালানি বিল পরিশোধের মতো কাজও করা যায়। এর ফলে গ্রাহক নিজেই নিজস্ব টাকা নিরাপদে পরিচালনা করতে পারে এবং সময় ও খরচ উভয়ই বাঁচে।

এর সুবিধাসমূহ (Benefits )

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের ফলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায় তা হলো:

  • ২৪×৭ ব্যাংকিং সেবা: ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই দিনে-রাতে যেকোনো সময় অ্যাকাউন্টে লগইন করে লেনদেন করা যায়।
  • একাউন্ট তথ্য জানতে পারা: একটুই ক্লিকে একাউন্টের ব্যালেন্স জানার সুবিধা এবং পূর্ববর্তী লেনদেনের হিসাব দেখা যায়।
  • অনলাইন টাকা স্থানান্তর: নিজের একাউন্ট থেকে অন্যের একাউন্টে টাকা পাঠানো যায়, ফলে ব্যাংকে গিয়ে টাকা দেওয়ার ঝামেলা নেই।
  • বিল পরিশোধ সুবিধা: বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ফোন ও ইন্টারনেট বিলসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল সরাসরি মোবাইল থেকে পরিশোধ করা যায়।
  • বৃহৎ লেনদেন: বড় ধরনের অর্থ স্থানান্তর, বেতন–ভাতা প্রদান বা সরকারি ভাতা বিতরণও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে সহজে করা যায়।

এগুলো ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সময় বাঁচে এবং ট্রানজেকশনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে, দূরত্বজনিত কারণে ব্যাংক শাখায় যেতে না পারলেও ঘরে বসে সব পরিষেবা পাওয়া যায়। বিগত সময়ে গ্রামীণ এলাকায় কাজ পাওয়া যায়নি, কিন্তু এখন মুঠোফোনে রেমিট্যান্স পেয়ে গৃহস্বামী ও কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।

জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা: নগদ, বিকাশ, রকেট ও উপায় (Popular mobile banking services: Nagad, bKash, Rocket and Upaya)

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং-এর জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আলোচিত সেবা হলো বিকাশ, নগদ, রকেটউপায়। চলুন প্রতিটির কথা একটু দেখি:

বিকাশ (bKash)

বিকাশ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল টাকা স্থানান্তর সেবা। এটি ২০১১ সালে চালু হয়েছিল এবং এখন প্রায় আট কোটি নিবন্ধিত গ্রাহক রয়েছে। বিকাশ অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করা গ্রাহকরা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টাকা পাঠানো-গ্রহণ, বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি করতে পারেন। বিকাশ দেশের সর্বত্র শহর-শহরে পাওয়া যায় এবং এটি দিনে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করে। অতএব, ছোট-বড় যেকোনো পেমেন্ট বা কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিকাশ সেবা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

নগদ (Nagad)

নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবা। এটি ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করলেও খুবই দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাত্র কয়েক বছরে নগদের গ্রাহকসংখ্যা চার কোটি ছাড়িয়েছে এবং এটি বিশেষ করে রেমিট্যান্স গ্রহণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নগদ অ্যাপ বা সিম মেনুর মাধ্যমে গ্রাহকরা দ্রুত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে, টাকা তুলতে এবং বিল পরিশোধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল ইত্যাদি নগদে পরিশোধ করা যায়। এছাড়া, নগদ গ্রামীণ ও শহর উভয় অঞ্চলে সহজলভ্য। ফলে ট্র্যাভেলস, দোকানপাট, বাজার–সবখানে নগদ ব্যবহার করে কেনাকাটাও করা যায়। উৎসবের সময় নগদ লেনদেন আরো বৃদ্ধি পায়, কারণ এতে দ্রুত টাকা পাঠানো ও নেওয়া যায়।

রকেট (Rocket)

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পরিচালিত রকেট বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে এটি গ্রাহককে টাকার অ্যাক্সেসের জন্য এজেন্ট এবং ATM বুথ প্রদান করে। রকেটের মাধ্যমে গ্রাহকরা এখনো দেশের যেকোনো রকেট বুথ থেকে নগদ তুলতে পারেন এবং প্রয়োজনে একাধিক ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে টাকা স্থানান্তর করতে পারেন। বিশেষ করে গ্রামে ঘরে পৌঁছে এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাওয়া সহজ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণ এলাকায় রকেট বুথ বাড়ায় ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক প্রসারিত হয়েছে। রকেটে অন্যান্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠানোর সুবিধা থাকায় গ্রাহকরা এটাকে ব্যাংক হিসাবের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করেন।

উপায় (Upay)

উপায় হলো ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ফিনটেক ব্র্যান্ড, যাত্রা শুরু ২০২১ সালের প্রথম দিকে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং ৬৪টি জেলায় সেবা দিচ্ছে। উপায়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা মোবাইলে টাকা পাঠানো, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, রেমিট্যান্স গ্রহণ, বেতন-ভাতা প্রদানসহ নানা আর্থিক কাজ করতে পারে। এছাড়া অনলাইন ও ই-কমার্স পেমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক প্রবাসী আয় গ্রহণের সেবা রয়েছে। উপায়ে শুধু মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে একাউন্ট খোলা যায়, যেখানে গ্রাহককে নিজস্ব তথ্য দিয়ে ভেরিফাই করতে হয়।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে নিরাপত্তা ও ব্যবহারবিধি (Security and guidelines for using mobile banking)

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রধান বিবেচ্য বিষয়। মোবাইল এবং সিম নিবন্ধন সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়, কারণ কারও নামে থাকা সিম থেকে হিসাব খোলার সুযোগ কম থাকে। বিআরসিএ এর সিম নিবন্ধন কার্যক্রম চালুর পর মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপত্তা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রাহকদের অবশ্যই নিজস্ব পিন, পাসওয়ার্ড ও ওটিপি কারও সাথে ভাগ না করা উচিৎ। ব্যাংক কোনো পরিস্থিতিতেই পিন বা ওটিপি দাবি করে না।

ব্যবহারবিধি হিসেবে অবশ্যই অফিসিয়াল অ্যাপ বা ইউএসএসডি মেনু ব্যবহার করতে হবে। অজানা কোনো লিংকে ক্লিক করা, সরকারি ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য মাধ্যমে লেনদেন করাকে এড়িয়ে চলতে হবে। লেনদেন শেষে অবশ্যই লগআউট করে দিতে হবে এবং সময়মতো ব্যালেন্স চেক করতে হবে। উপরন্তু, মোবাইল ব্যাংকিং করার সময়ে সবসময় নিজস্ব বা বিশ্বাসযোগ্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা উচিৎ; পাবলিক ওয়াই-ফাই এ থেকে লেনদেন এড়িয়ে চলুন। সাইবার আক্রমণ বা ফিশিং থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনে মেসেজ ও কল যাচাই করুন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধা (Limitations and Disadvantages of Mobile Banking)

যদিও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে, তবুও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। তবে, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এক অপারেটরের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অপারেটরের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো না পারা। অর্থাৎ যদি বিকাশ থেকে নগদে টাকা পাঠাতে চান, এখনো ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করতেই হয়। এছাড়া, ইন্টারনেট বা শক্তিশালী সিগন্যাল না থাকলে লেনদেন অসম্ভব হয়, তাই দূরগ্রামী এলাকায় কখনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে লেনদেনের সীমা ও চার্জ থাকায় ছোট পরিমাণ লেনদেনে খরচ বেশি মনে হতে পারে।

অন্যদিকে, নিরাপত্তার কারণে ব্যবহারকারীদের মাঝে অনিশ্চয়তাও আছে। যদি কেউ পিন বা ওটিপি অন্যের হাতে পড়ে যায়, তবে লেনদেন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যদিও সিম রেজিস্ট্রেশন এবং এনক্রিপশন ব্যবস্থার কারণে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমেছে, তবুও ব্যবহারকারীদের নিজেও সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিদিন নতুন ডিজিটাল হুমকি আসছে, তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঠিক ব্যবহার বিধি মেনে চললেই এই প্রযুক্তির উপকারিতা গ্রহণ করা যাবে।

আরো দেখুনঃ Benefits of Digital Wallets ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহারের সুবিধা

আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করার টিপস Tips for Balancing Income and Expenses

বাংলাদেশ ব্যাংক রিপোর্ট

বিকাশ অফিসিয়াল সাইট

নগদ পরিষেবা কেন্দ্র

রকেট পরিষেবা উইকি

উপায় তথ্যসূত্র

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top